বিমান তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিল তাহিরপুরের স্কুলছাত্র

বিমান তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিল তাহিরপুরের স্কুলছাত্র

সিএম ইউনুস/রমেন্দ্র নারায়ণ বৈশাখ: বিমান তৈরি করে আকাশে উড়িয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে তাহিরপুর উপজেলার প্রত্যন্ত হাওর পারের স্কুল ছাত্র আনিসুল হক (১৬)। রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে বিমান নিয়ন্ত্রণ করে এক কিলোমিটার আকাশে উড়িয়েছেন দশম শ্রেণির ওই ছাত্র। এ ঘটনায় সিলেট জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বিমানের সাথে তাকে দেখতেও ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ। তার অসাধারণ উদ্ভাবনে তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল তাকে ২ লক্ষ টাকা পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা দেন। 

আলাপকালে আনিসুল জানায়, ১০ বছর বয়স থেকেই নিজের হাতে বিমান তৈরি করে আকাশে ওড়ানোর স্বপ্ন দেখতো সে। ইউটিউবে ভিডিও দেখে বিমান তৈরির কলাকৌশল রপ্ত করতে থাকে। অবশেষে সেই স্বপ্ন পূরণ করে দেখিয়েছে আনিসুল। গত সোমবার তার তৈরি বিমানটি ১ কিলোমিটার আকাশে উড়ে ফিরে আসে। 

১ কেজি ৮ গ্রাম ওজনের বিমানটির দৈর্ঘ্য ৫ ফুট। উচ্চতা ও প্রস্থে সাড়ে ৬ ইঞ্চি। বিমানটিতে দুইটি ব্রেসলেস ডিসি মোটর ব্যবহার করা হয়েছে। স্পিড নিয়ন্ত্রণের জন্য আরো দুটি এএসসি ৩০ এম্পায়ার ইলেকট্রিক সার্ভো মোটর যুক্ত করা হয়েছে। বিমানটি নিয়ন্ত্রণে প্লাইড স্কাই রিমোট ব্যবহার করেছেন আনিসুল।

আনিসুল হক তাহিরপুর উপজেলার সাউদেরখলা গ্রামের হাজী এম জাহের আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। তাঁর বাবা আহাদ মিয়া পেশায় কৃষক। মা জাহানারা বেগম একজন গৃহিণী। আনিসুলরা ছয় ভাই, তিন বোন। তার গ্রামের বাড়ি তাহিরপুর উপজেলার ৩ নম্বর বড়দল দক্ষিণ ইউনিয়নের হাঁপানীয়া গ্রামে।  

পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শৈশব থেকেই বিমান বানানোর নেশা ছিল আনিসুল হকের। এজন্য সে তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে পাওয়া টাকা খরচ না করে জমিয়ে রাখতো। পরে জমানো টাকা থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকার বিমান তৈরির খুচরা যন্ত্রাংশ কিনে আনে ঢাকা থেকে। অবশেষে দেড় বছরের চেষ্টায় একটি ক্ষুদ্র বিমান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। গত সোমবার সকালে বাড়ির আঙিনায় বিমান উড়িয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয় সে। 

আনিসুল হক জানায়, ইউটিউবে ভিডিও দেখে বিমান তৈরির কৌশল রপ্ত করেছে। শেষ পর্যন্ত বিমানটি আকাশে উড়াতে পেরে সে খুবই আনন্দিত। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পেলে আরো ভালো কিছু করা সম্ভব বলে জানায় সে। এ ব্যাপারে আরো কাজ করার আগ্রহ রয়েছে জানিয়ে সরকারের সহযোগিতা কামনা করে আনিসুল হক। তাহিরপুর উপজেলার বড়দল দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুস আলী বলেন, ‘শিক্ষার্থী আনিসুল অসাধারণ একটি জিনিস তৈরি করেছে। তার এই অসাধারণ কাজে আমরা সকলে আনন্দিত ও গর্বিত। আশা করি সে এরকম আরও অনেক কিছু তৈরি করবে।  

এদিকে, আনিসুলের উদ্ভাবনে খুশি হয়ে তাকে দুই লক্ষ টাকা উপহার দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে আনিসুল হক ও তার বাবা আহাদ মিয়াকে আমন্ত্রণ করে ফুল দিয়ে বরণ করেন তিনি।  

এসময় আনিসুল ও তার বাবা সহ উপস্থিত সবাইকে মিষ্টি মুখ করিয়ে তার উদ্ভাবনী কাজে আরো অগ্রগতি বৃদ্ধির জন্য উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে দুই লক্ষ টাকা উপহার দেয়ার আশ্বাস দেন উপজেলা চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা প্রকৌশলী আরিফুল্লা খান, তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জুনাব আলী, দপ্তর সম্পাদক রমেন্দ্র নারায়ণ বৈশাখ, বাদাঘাট সরকারি ডিগ্রি কলেজ অধ্যক্ষ জুনাব আলী, হাজি এমএ জাহের উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক গোলাম মুরশেদ, হাঁপানীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মাধব চন্দ্র সরকার, সাংবাদিক আবুল কাশেম, শওকত হাসান প্রমুখ।