ইমাম সমিতির সেমিনারে নবাগত পুলিশ সুপার

ইমামগণ সমাজের ইমামতি করতে পারলে  সামাজিক আচার অনুষ্ঠান আরো সমৃদ্ধ হত : মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন

ইমামগণ সমাজের ইমামতি করতে পারলে  সামাজিক আচার অনুষ্ঠান আরো সমৃদ্ধ হত : মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন

সিলেটের নবাগত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, সমাজকে এগিয়ে নিতে ইমামদের ভূমিকা অপরিসীম। ইমামগণ কেবল মসজিদে ইমামতি না করে সমাজের ইমামতি করতে পারলে সামাজিক আচার অনুষ্ঠান আরো সমৃদ্ধ হত। আগেকার সময়ে মানুষ মসজিদের ইমামদেরকে আদর্শ ব্যক্তি সাব্যস্ত করতো আর এখন ইমামগণ সততার মানদন্ডে সেরা হলেও অন্যান্যরা সে কৃতিত্ব দিতে চায় না। এটাই আমাদের সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ।

বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি সিলেট মহানগর শাখার আয়োজনে ও জালালাবাদ লিভার ট্রাস্টের সার্বিক সহযোগিতায় গতকাল ১৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর হোটেল নির্ভানাইন এ লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধ ও জনস্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে ইমামদের দায়িত্ব ও কর্তব্য শীর্ষক সেমিনারে  প্রধান অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার আরো বলেন, ওলি-আউলিয়ার পুণ্যভূমি সিলেটে চাকরীর সুযোগ হয়েছে, এটা আমার জীবনের অনেক পাওয়া। তবে সম্মানের সাথে, সততার নিরীক্ষে যেন সকল কাজ করতে পারি, সে ব্যাপারে আপনাদের দোয়া ও সহযোগিতা চাই।
জালালাবাদ লিভার ট্রাস্টের চেয়ারম্যান দেশের অন্যতম লিভার ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ মামুন আল-মাহতাব সপ্নীল বলেন, আমার পৈতৃক বাড়ি সিলেটে নাড়ির টানে আমি সিলেটে চিকিৎসা সেবা দিতে আসি। লিভার ক্যান্সার মরণ ব্যাধি ঘাতক রোগ হলেও কেবল সচেতনতার মাধ্যমে এ রোগকে প্রতিরোধ করা যায়। আর সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে ইমামদের বিকল্প নেই। আমি মানব সেবাকে ইবাদত মনে করি। কেবল টাকা কামানো আমার ইচ্ছা নয়, মানুষের অন্তরের ভালবাসাই আমার শ্রেষ্ঠ প্রাপ্য।
আল্লামা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ি বলেন, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। রোগ-বালাই, চিকিৎসা, প্রতিষেধক সহ সকল বিষয়ে ইসলামের বক্তব্য স্পষ্ট। স্বাস্থ্য সেবা থেকে স্বাস্থ্য সচেতনতা ফলপ্রসু। তাই ইমামাগণের ধর্মীয় দায়িত্বের পাশাপাশি মানুষকে খাওয়া-দাওয়া, পোষাক-পরিচ্ছদ যেন নবীর সুন্নাহ মাফিক সে বিষয়ে গুরুত্ব দিতে পারলে চিকিৎসা ব্যয় অনেক সাশ্রয় হবে।
মহানগর সেক্রেটারী কারী মাওলানা সিরাজুল ইসলাম ও মাওলানা মুফতী আব্দুর রহমান শাহজাহানের যৌথ পরিচালনায় সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শায়খুল হাদীস আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক, দরগাহ মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা আতাউল হক জালালাবাদী, বিশিষ্ট লেখক গবেষক মাওলানা রুহুল আমীন সাদী, কাজিরবাজার মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা শাহ মমশাদ আহমদ, মাওলানা নজমুদ্দীন কাসেমী, জেলা সভাপতি মাওলানা এহসান উদ্দীন, মহানগরের সাবেক সভাপতি মাওলানা আব্দুল্লাহ আনসার, মুফতী জিয়াউর রহমান, নূর আহমদ কাসেমী। 
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমী সিলেটের উপ-পরিচালক মাওলানা শাহ নজরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ইমামগণ জুমআর খুতবায় মানুষের ঈমান আমলের উন্নতির পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন উৎপাদনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করছেন। দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছেন। আধুনিক চিন্তা, চেতনা দিয়ে মানুষকে সচেতন করছেন। 
মহানগর সভাপতি মাওলানা হাবীব আহমদ শিহাব সভাপতির বক্তব্যে বলেন, ইমামগণ সৎ কাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ, মাদক, জুয়া, হাউজি, ঘুষ, দুর্নীতি ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার। দেশের জনকল্যাণকর কাজে ইমামগণের ভূমিকার স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত। আমরা কাজের মূল্যায়ন চাই। ইমাম-মোয়াজ্জিন সার্ভিস রুলস বাস্তবায়ন চাই। 
জালালাবাদ লিভার ট্রাস্টের সার্বিক সযোগিতায় “লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধ, ইসলামের দৃষ্টিতে চিকিৎসা ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান” বিষয়ে প্রকাশিত একটি খুৎবার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। 
সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা মুহিব্বুর রহমান মুক্তিরচকী, হযরত শাহজালাল ডিওয়াই কামিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মুফতী আবু সালেহ মোঃ কুতবুল আলম, নয়া সড়ক মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা সাইফুল্লাহ, লাউয়াই আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা রওনক আহমদ, ভার্থখলা মাদরাসার সাবেক মুহাদ্দিস মাওলানা শামসুদ্দীন মোহাঃ ইলিয়াস, মাওলানা কারী শহীদ আহমদ, মাওলানা শাহ আশরাফ আলী মিয়াজানী, মাওলানা আহমদ হোসেন, মাওলানা এখলাছুর রহমান, মাওলানা বুরহান উদ্দিন কাসেমী, মাওলানা আব্দুস সালাম, মাওলানা হিফজুর রহমান, জেলা সেক্রটারী মাওলানা জালাল উদ্দিন ভূইয়া, মাওলানা আব্দুল ওদুদ চৌধুরী, মাওলানা আকমল হোসাইন, মাওলানা ছুহাইব আহমদ, মাওলানা আব্দুল্লাহ শাহজাহান, মাওলানা আব্দুস শহীদ, মাওলানা মুজাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, মাওলানা আছরারুল হক, হাফিজ মাওলানা আশিকুর রহমান, মাওলানা মাসুম আহমদ প্রমুখ। এছাড়াও সেমিনারে সিলেট নগরীর অনেক মসজিদ কমিটির দায়িত্বশীলগণ সহ সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সকল ওয়ার্ডের ১৭১ জন ইমাম ও খতিব উপস্থিত ছিলেন। 
সেমিনার শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন শায়খুল হাদীস আল্লামা শায়খ আব্দুল কাদির বাগরখলী। বিজ্ঞপ্তি